ভাদুরে বৃষ্টি
কী সুন্দর সবুজ ঘাসের মাঠ। যেখানে ঘাসের সবুজ আজো সবুজ। একটু আশা জেগেছিলো, যখন কেউ বললো,— “বৃষ্টি হোতে পারে”। পরক্ষণে মনে মনে সে ভাবলো,— কেউ যদি একজন তাকে একটি ছাতা দিতো। পাশের ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একজন পথচারী বললো— “ভাদুরে বৃষ্টি বড্ড বিরক্তিকর”।
বাজারে গিয়ে সে একটি ছাতা কেনার সিদ্ধান্ত নিলো। বৃষ্টির জন্যে তার রেইনকোট ছিলো কেননা বৃষ্টিকে সে খুব উপভোগ করতো। কিন্তু সেটা ছিলো বাড়িতে— বাক্সবন্দী। বৃষ্টির দিন যেন কেমন— সব কিছু মনে পড়ে যায়। সবকিছু বৃষ্টির দখলে চলে যায়।
যে কোনো ঘরের চাল বৃষ্টির সময় ভিজে যায়।
ভিজে যায় সাইকেলের টায়ার। আর ঝালমুড়ি ভীষণ পছন্দ করে শহরবাসী।
তুমুল বৃষ্টি। শহরের রাস্তাগুলো জনশূণ্য। নির্জনতায় রাস্তারা উজ্জ্বল হোয়ে উঠেছে। দু’পাশের সারি সারি দোকানগুলো হঠাৎ নিষ্পাপ চোখে চেয়ে আছে। ছুটি শেষে দুই স্কুল ছাত্রের ভীষণ ভিজে ভিজে বাড়ি ফেরা। সদিচ্ছায় ভরপুর তাদের চঞ্চল দেহ। তাদের ধবধবে শাদা দাঁতের হাসি অবমুক্ত হোয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বৃষ্টির শরীরে।
বীজ বপন বাদেই কীভাবে সারা মাঠজুড়ে ঘাস হয়। ভাব আর নির্ভাবনার মতো নরম ঘাস। সবুজ ঘাস। বিকেলের মধ্যে প্রবেশ করে সবুজ বিকেল। এমন দ্বৈত বিকেল ধীরে ধীরে সন্ধ্যার দিকে রওনা দিতে উদ্যত। মাঠের দিকে দৃষ্টি ফেলে এইসব প্রস্থান মুহূর্ত দেখা যায়।
ছাতা কেনার আগে সে কাঠের হাতলটা শক্ত কিনা দেখে নিলো।
গত কয়েক বছর খুব বজ্রপাত হচ্ছে। ফলে ভেজার যা একটু ইচ্ছে হয় তাও মরে যায়। আজ অবশ্য কোনো আওয়াজ নেই। নির্মল বৃষ্টি। বাতাশের ভেতর ব’য়ে যাচ্ছে ঠান্ডা হাওয়া। কেউ কেউ ফুলহাতা শার্ট পরেছে।
“বৃষ্টির ফোঁটা পবিত্র, জুতোর পাড়া দিতে হয়না”— মা বলেছিলো।
দু’পায়ের প্যান্ট গুটিয়ে হাতে তুলে নিলো জুতো। সে নিজেকে বললো,— “খালি পায়ে হাঁটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো।” মাথায় ছাতা ফুটিয়ে দ্রুত হাঁটতে লাগলো। পাড়ার দোকান থেকে মুড়ি আর চানাচুর নিয়ে বাড়ি ফিরে স্ত্রীর হাতে নোতুন ছাতাটা দিতে দিতে সে খুশি মনে বললো,— “ভাগ্যিস বেরোনোর আগে সর্ষের তেল মেখেছিলাম, মনে হয় এবারের মতো আর ঠান্ডা লাগবে না।”